Opening Hours

Sat - Wed: 11 AM - 10 PM

মাতৃদুগ্ধ পানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রত্যেক বাচ্চাকে জন্মানোর পর প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন কিছু দেওয়া উচিত নয়। একে বলে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং (Exclusive Breast feeding)। এই এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং বাচ্চার শারীরিক বিকাশ ঘটাবে, ওজন বাড়াবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে।

বাচ্চা জন্মানোর পর প্রথম দুদিন পর্যন্ত মায়েদের বুক থেকে হলুদ রঙের গাঢ় এক ধরনের দুধ বের হয় একে বলে কলোস্ট্রাম (Colostrum)। বাচ্চাকে কলোস্ট্রাম খাওয়ানো অত্যাবশ‍্যক কারণ এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে:

  1. প্রোটিন
  2. ফ্যাট
  3. কার্বোহাইড্রেট
  4. ভিটামিন
  5. মিনারেলস
  6. অ্যান্টিবডি

যেগুলি বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয়। অনেকেই কলোস্ট্রাম বাচ্চার পক্ষে ক্ষতিকারক ভেবে ফেলে দেয় কিন্তু সেটি অনুচিত। একজন মা দিনে প্রায় ৭৫০ মিলি লিটার দুধ উৎপাদন করেন এবং প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধ থেকে বাচ্চা প্রায় ৬৫ ক্যালোরি পর্যন্ত শক্তি অর্জন করতে পারে।

কেনো বুকের দুধ পান করানো ওয়াজিব অর্থাৎ অত্যাবশ্যক আসুন তা সংক্ষেপে আলোচনা করে আপনাদের জানিয়ে দেই-

নানা রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে –

  • Middle ear infection

    ৩ বা ততোধিক মাস ধরে দুধ পান করালে এই রোগের ঝুঁকি ৫০% কমাতে সক্ষম।

  • শ্বাস নালীর সংক্রমণ

    ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে এক্সক্লুসিভ বুকের দুধ খাওয়ানো এই সংক্রমণের জন্য হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৭২% হ্রাস করে।

  • সর্দি সংক্রমণ

    ৬ মাস ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের মধ্যে গুরুতর সর্দি ও ভাইরাল ইনফেকশন কানে বা গলাতে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি ৬৩% কমে যায়।

  • অন্ত্রে সংক্রমণ

    স্তন্যপান করানো অন্ত্রে সংক্রমণের ৬৪% হ্রাস হয়।

  • হঠাৎ শিশুমৃত্যু

    স্তন্যপান করানোর ১ মাস পরে এ ঝুঁকি ৫০% হ্রাস হয় এবং প্রথম বছর দুধ পান করানোর পরে ৩৬% ঝুঁকি হ্রাস হয়।

  • অ্যালার্জিক রোগ

    কমপক্ষে ৩-৪ মাস ধরে এক্সক্লুসিভ বুকের দুধ খাওয়ানো হাঁপানি, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস এবং একজিমার ২৭-৪২% ঝুঁকি হ্রাস করে।

  • সিলিয়াক ডিজিজ

    বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের সিলিয়াক ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি ৫২% কম থাকে।

  • পেটের রোগ থেকে মুক্তি

    বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের শৈশব প্রদাহজনক পেটের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০% কম হতে পারে।

  • ডায়াবেটিস

    কমপক্ষে ৩ মাস ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির হ্রাস ৩০% এর উপরে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস ৪০% এর উপরে।

  • শিশুর লিউকিমিয়া

    ৬ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো শৈশব লিউকিমিয়ার ঝুঁকিতে ১৫-২২% ঝুঁকি হ্রাস হয়।

বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুরা স্মার্ট ও বুদ্ধি প্রখর হয় –
কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ফর্মুলা খাওয়ানো বাচ্চাদের মধ্যে মস্তিষ্কের বিকাশ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

অধ্যয়নগুলি ইঙ্গিত দেয় যে বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের বুদ্ধি স্কোর বেশি থাকে এবং তাদের বড় হওয়ার সাথে সাথে আচরণ এবং শেখার ক্ষেত্রে যেকোনো বাঁধা ও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম হয় এবং নানা গবেষণা পরিষ্কারভাবে দেখায় যে বুকের দুধ খাওয়ানো তাদের দীর্ঘমেয়াদী মস্তিষ্কের বিকাশের উপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এছাড়াও –

  • ডায়রিয়া, অ্যালার্জি, নিউমোনিয়া এবং অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করার অন্যতম সেরা উপায়।
  • বুকের দুধ খাওয়ালে মায়েদের স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।
  • অর্থনৈতিক দূরাবস্থা দূরীকরণে এটি পরিপূরক কারণ ব্যয়বহুল সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে।
  • বুকের দুধে কোলস্ট্রাম পেট পরিষ্কার করে এবং ওষুধের প্রয়োজনীয়তা দূর করে।
  • প্রসবের পরে নতুন মায়ের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • যে সকল মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ান তাদের হরমোন পরিবর্তনজনিত হতাশার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • একটি শিশু যত বেশি দুধ পান করে তত বেশি দুধ তৈরি হয়, এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া মা ও শিশুর ২ জনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব মেটাতে।

আপনাদের ধারণা এতোক্ষণে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা, তাই বুকের দুধ পান নিয়ে কোনো হেলাফেলা ও অবহেলা নয়।

এবার ব্রেস্ট ফিডিং কতোবার ও কতো সময় ধরে করাবেন তা জেনে নেয়া অপরিহার্য।আমি এ ব্যাপারে ছাড় দিতে পারিনা।তাই চলুন কষ্ট করে আরেকটু পড়ে নেই –

  • যেহেতু বাচ্চাকে কেবল মায়ের দুধ দেওয়া হয়,তাই খাওয়ানোর ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর করে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী। এর অর্থ হল আপনি আপনার বাচ্চাকে দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ বার বুকের দুধ খাওয়ান।
  • রাতের বেলা স্তন্যপান করাবেন অবশ্যই এবং সাবধানও থাকবেন যাতে আপনি ঘুমিয়ে না যান।
  • স্তন্যপান করানোর সময়কাল শিশুর প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। প্রতিটি সেশন ২০-৪৫ মিনিটের মধ্যে থাকতে পারে।
  • এক স্তন থেকে অন্য স্তনে যাওয়ার আগে শিশুর খাওয়ার সন্তুষ্টি হতে হবে। এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন।

কিছু টিপস –

  • শিশুর জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে স্তন্যপান করানো শুরু করা উচিত।
  • ৬মাস ধরে এক্সক্লুসিভ বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং তখন বাচ্চাকে কেবল মায়ের দুধ দিতে হবে অন্য কিছু নয়।এমনকি পানিও দেওয়া উচিত নয়।
  • শিশু যখন খেতে চাইবে তখনই স্তন্যপান করানো উচিত।
  • কৃত্রিম স্তনবৃন্ত ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
  • কর্মরত মায়েরা ব্রেস্ট পাম্পে দুধ খুবই সাবধানে ও পরিষ্কারভাবে সমরক্ষণ করবেন।

WHO সুপারিশ করে যে –

শিশুর সর্বোত্তম বৃদ্ধি, বিকাশ এবং স্বাস্থ্য অর্জনের জন্য জীবনের প্রথম ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। তারপরে, তাদের বিকশিত পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করার জন্য, দু’বছর বা তারও বেশি সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রেখে শিশুদের পুষ্টি পর্যাপ্ত এবং নিরাপদ পরিপূরক খাবার গ্রহণ করাতে হবে।

আমিও একজন মা, বাচ্চার কোনো ক্ষতি হোক তা আমি চাইবোনা। তাই অযথা এ সময়ে উল্টো পাল্টা ডায়েট করে শিশুর মৃত্যু ডেকে আনবেন না। ওজন কমানোর সুপরামর্শ পেতে একজন ডায়েটিশিয়ান আপনার স্বাস্থ্যের বন্ধু। মনে রাখবেন আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত।


Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *