আগের পর্বে পেপটিক আলসার সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। তবে আস্তে, এই রোগ নিয়ে এতো ভয় পাবেন না। সৃষ্টিকর্তা সকল রোগের সমাধান দিয়েছেন। আমি আজ সমাধানস্বরূপ কী কী খাদ্য গ্রহন করবে ও কী কী গ্রহন করবেনা তা নিয়ে আলোচনা করবো।
-
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ
হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি বড় সমীক্ষায় দেখা গেছে যে উচ্চ ফাইবারযুক্ত ডায়েট ডুডোনাল আলসার বৃদ্ধির হ্রাস করেছিলো। ৬ বছরের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা কম ফাইবার গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি যারা ফাইবার গ্রহণ করেছেন তাদের চেয়ে ৪৫% বেশি ছিল। আঁশযুক্ত খাবার বলতে মটর, শিম, ডাল, আপেল, বাদামি ভাত, গাজর ইত্যাদি। তবে রাতে আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহন করা যাবেনা।
-
ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার গ্রহন
হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভিটামিন-এ গ্রহণ আলসার রোগকে ধীরে ধীরে কমিয়ে এনেছে। কম ঝুঁকির সাথে জড়িত ছিল। সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-এ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ঝুঁকি প্রায় ৫০% কমে গিয়েছিলো। তাছাড়া প্রায় ৫ লাখ নারী ও পুরুষের উপর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ আলসার বিকাশ হ্রাস করেছে। ভিটামিন-এ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে প্রতিরক্ষক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভিটামিন-এ আলসার রোগের বিকাশের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলকভাবে কাজ করে থাকে। ভিটামিন-এ এর ভাল উৎসের মধ্যে রয়েছে কলিজা, গাজর, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, কুমড়া, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদি।
-
শাকসবজি
যেকোনো ধরনের সবুজ সবজী খেতে হবে, আধা সিদ্ধ করে অথবা স্যুপ এর মতো করে, যাতে হজমে কোনো চাপ না পড়ে। সবজীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আপনার আলসার নিরাময়ের জন্য বেশ ভাল। মশলাদার মরিচ এবং টমেটো / টমেটো পণ্য কিছুটা এড়িয়ে চলুন। তাছাড়া রাতে শাক জাতীয় খাবার গ্রহন করবেন না।
-
চর্বিহীন প্রোটিন/উদ্ভিদ প্রোটিন
কী শুনতে অবাক লাগছে তাইনা? কিন্তু কথা সত্যি, কারণ প্রাণীজ প্রোটিন যেমন গরুর অথবা মুরগীর মাংস হজম হতে গিয়ে আলসার রোগীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এসময় উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে বলা হয়। ডিম, শুকনো মটরশুটি, ডাল ইত্যাদি। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ যেমন – সালমন, ম্যাকেরল এবং সারডাইন জাতীয় ফ্যাটযুক্ত মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাট সরবরাহ করে যা আলসার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-
ভেষজ খাদ্য
স্বাস্থ্য-উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ খাদ্য যেমন – হলুদ, দারুচিনি, আদা এবং রসুন ইত্যাদিতে এন্টিমাইক্রোবায়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা আপনার আলসার এর ঘা কমাতে সাহায্য করবে। আপনি আদা দারুচিনি অথবা লং দিয়ে চা খেতে পারেন তবে এক্ষেত্রে চিনির বদলে মধু ব্যবহার করতে হবে। তাতে করে বেশ উপকারই হবে ক্ষতি নয়।
এছাড়াও দই, গমের শস্য গ্রহন করতে পারবেন।
কোন খাবার খাবেন না
ঝাল খাবার, জাঙ্ক ফুড, মশলা তরকারী, কফি, দুধ, চকলেট, লাল মাংস ইত্যাদি খাবার আলসারের ক্ষেত্রে হারাম।
টিপস হিসেবে বললে
- স্ট্রেস আনা যাবেনা
- ঘুম ৬-৭ ঘন্টা হতে হবে
- পানি ২-৩ লিটার গ্রহন করতে হবে
- কোনো বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবেনা
- ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে
আপনারা ভয় পাবেন না। একটি সুন্দর লাইফস্টাইল ও সঠিক খাদ্যগ্রহন আপনাদের আলসারের মতো বড় রোগকেও কাবু করতে পারে। এই কাবু করতে একজন ডায়েটিশিয়ান আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।পাশাপাশি খাবার তালিকা ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে ফেলুন। আজ তবে এ পর্যন্তই চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বের জন্য।