Opening Hours

Sat - Wed: 11 AM - 10 PM

চলছে শীতকাল। তার মধ্যে করোনা। সাবধান থাকা আবশ্যক। তার সাথে এই শীতকালীন সবজির দিকে যাওয়াটাও আবশ্যক। আজ আমি খুবই সুস্বাদু পরিচিতো একটি সবজি নিয়ে আলোচনা করবো। ছোটো বড়ো সবার প্রিয় ফুলকপি। জ্বী আজ আমি ফুলকপি নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেই তবে –

প্রথমেই পুষ্টিগুণ নিয়ে জানবো, অবাক হয়ে যাবেন আজকের লেখাতে –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) জাতীয় পুষ্টিকর ডাটাবেস অনুসারে, আধা ফুলকপির এক কাপ অর্থাৎ প্রায় ১০০ গ্রাম ওজনের ফুলকপির মধ্যে রয়েছে –

  • ২৭ক্যালোরি
  • প্রোটিন ২গ্রাম
  • চর্বি ০.৩ গ্রাম
  • ২.১ গ্রাম ফাইবার
  • ২ গ্রাম চিনি
  • ৫গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
  • ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
  • ১৬ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
  • ফসফরাস ৪৭ মিলিগ্রাম
  • ৩২০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
  • ৫১.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
  • ৬.৬ মাইক্রোগ্রাম (এমসিজি) ভিটামিন-কে
  • ভিটামিন-বি ০.১৯৭ মাইক্রোগ্রাম
  • ফোলেট ৬১ মাইক্রোগ্রাম
এক কাপ কাঁচা ফুলকপি সরবরাহ করে প্রতিদিনের –

  • ভিটামিন-সি এর ৭৭ শতাংশ
  • দৈনিক ভিটামিন-কে এর ২০ শতাংশ
  • ভিটামিন-বি৬ এবং ফোলেটের জন্য ১০ শতাংশ বা তার বেশি
  • এছাড়াও কিছু পরিমানে থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে।
এবার স্বাস্থ্যের কোন উপকারে কাজে লাগে তা জেনে নেই –

  • হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

    ফুলকপির মধ্যে ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বেশি। উভয়ই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে ফুলকপিতে থাকা ফাইবার গ্রহণের ফলে কিছু রোগের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঝুঁকি কমে যায়।যেমন – করোনারি হৃদরোগ,  স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, স্থুলত্ব , কিছু গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল রোগ ইত্যাদি।তাছাড়া উচ্চতর ফাইবার গ্রহণের ফলে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস হয়। আরেকটি বিষয় ওজন কমার ক্ষেত্রেও ফুলকপির জুড়ি নেই, কারণ যার হজম ক্ষমতা ভালো তার অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগ কম থাকে। তাই ওজন কমাতেও ফুলকপি সেরা।

  • ক্যানসার প্রতিরোধ করে

    ফুলকপিতে থাকা সালফোরাপেন ক্যানসার কোষকে মেরে টিউমার বাড়তে দেয় না।কারণ এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকারক ফ্রি-রেডিকেল রোধ করে অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে থাকে। স্তন ক্যান্সার, কোলন ও মূত্রথলির ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও আছে ফুলকপির। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা ফুলকপি নিয়মিতো গ্রহণ করেছেন তাদের ফুসফুস, কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ইত্যাদির ঝুঁকি কমে গিয়েছে। তাই দেরী না করে খেতে থাকুন ফুলকপির তরকারি।

  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

    কোলিন ফুলকপির একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী ভিটামিন যা ঘুমের পাশাপাশি স্মৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। কারণ কোলিন মস্তিষ্কের কগনিটিভ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। অর্থাৎ এতে স্মৃতিশক্তি বাড়ে ও দ্রুত শিখতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের কারণে স্মৃতিবিভ্রমের সম্ভাবনা এবং শৈশবে টক্সিনের প্রভাবে মস্তিষ্ক দুর্বলতা কমায়।

  • হার্টকে ভালো রাখে

    ফুলকপি হ’ল হৃদয়-বান্ধব সবজি যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। এতে বিদ্যমান সালফোরাফেন অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত ক্ষতি হ্রাস করে। এইভাবে এটি রক্তচাপ এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস হ্রাস করতে সহায়তা করে। অতএব যারা উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন ও হৃদয়কে সুস্থ রাখতে চান তারা খাবারের তালিকায় ফুলকপি রাখতে ভুলবেন না!

  • ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করে

    সালফার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ফুলকপি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে, গ্লুটাথিয়ন পুরো শরীর জুড়ে কোষকে নানা রকম ভাইরাসের বিরুদ্ধে রক্ষা করে ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলে। তাই এই শীতকালে ফুলকপি খাবেন কিন্তু!

  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে

    ফুলকপিতে ইন্ডোল ৩ কার্বিনল (আই ৩সি) নামে একটি উদ্ভিদ যৌগ থাকে যা এস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।আই ৩ সি এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলাদের উভয়ই ইস্ট্রোজেন সংক্রান্ত স্তন এবং প্রজনন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে। তাই ফুলকপি খান
    হরমোনজনিত সমস্যা মেটাতে।

  • ত্বকের যত্নে

    যারা স্কিন ভাল রাখতে চান তারা নিয়মিত ফুলকপি খেতে পারেন। ফুলকপিতে ভাল পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে যা আমাদের দেহের কোলাজেন প্রোডাকশনে সাহায্য করে। বয়সের রিংকেল বা এজিং প্রসেস কে ধীর করে দেয়। এছাড়া যেহেতু হজম ক্ষমতাও ভালো থাকে তার মানে পেট ক্লিয়ার। আর পেট ক্লিয়ার মানে স্কিন ক্লিয়ার।

  • হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে

    ফুলকপির মধ্যে ভিটামিন-সি রয়েছে যা কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা জয়েন্ট এবং হাড়কে নানা রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।এছাড়াও, এতে ভিটামিন-কে রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে।তাছাড়া ফুলকপি পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই হাড়ের ক্ষয় রোধে সহায়তা করতে পারে।

সব খাবারেরই ভালো মন্দ রয়েছে, তাই কখন ক্ষতিকর হতে পারে তা নিয়ে তো বলতেই হবে –

  • থাইরয়েড থেকে থাকলে-

    থাইরয়েড হল আপনার ঘাড়ে একটি ছোট গ্রন্থি যা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে। এর কাজটি করার জন্য, আয়োডিন দরকার। প্রচুর ফুলকপি খাওয়ার ফলে আপনার থাইরয়েড আয়োডিন শোষণ থেকে বিরত থাকতে পারে এবং হরমোন তৈরি থেকেও বিরত রাখতে পারে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা থেকে থাকলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উত্তম।

  • IBS থেকে থাকলে

    ফুলকপির মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার পেট ফুলে যাওয়া এবং গ্যাসের কারণ হতে পারে, বিশেষত (আইবিএস), পেটের রোগ (আইবিডি), ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস জাতীয় রোগীদের না খাওয়া উত্তম।

  • হৃদরোগী আগে থেকে হয়ে থাকলে

    যদি আপনি হৃদরোগের জন্য রক্ত পাতলা করার ঔষধ যেমন স্ট্যাটিন গ্রহণ করেন তবে আপনার পুষ্টিবিদ আপনাকে ভিটামিন-কে জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা পরামর্শ দিয়ে থাকবেন। ফুলকপিতে বেশ ভালো পরিমান ভিটামিন-কে রয়েছে, তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ আবশ্যক।

আমাকে অবশ্যই জানাবেন ফুলকপি নিয়ে আপনাদের মূল্যবান মতামত। আজ তবে এ পর্যন্ত …


Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *