গর্ভবতী মায়েরা সবসময় নানা আতংকে থাকে, কী খাবে কী খাবেনা। সেক্ষেত্রে বলে নেই, একেকজন মানুষের যেমন একেকরকম ডায়েট চার্ট, তেমনি মায়ের শারীরিক মানসিক অবস্থা ইত্যাদিভেদে একেকভাবে খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই এই ব্যাপারে আমার সাজেশন হবে – হেলাফেলা না করে প্রথম থেকে ডাক্তারের পাশাপাশি একজন ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন হন। তারপরো আমার কাজ আপনাদের একটি গাইডলাইন দেয়া।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রথমেই আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কী কী খাবার এ সময়ে একটু এড়িয়ে যাওয়া উচিত অথবা পরিমানে কম খাওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করবো –
আনারস
আনারসে ব্রোমেলাইন রয়েছে, যা সার্ভিক্সকে নরম করে তুলতে পারে যা গর্ভবতী মহিলার জন্য বিপজ্জনক। এটি গর্ভপাত ঘটায়।বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস আনারস খাওয়া সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রথম তিন মাস অবশ্যই আনারস এড়িয়ে চলুন এবং সম্ভব হলে গর্ভকালীন পুরো সময়টা আনারস না খাওয়াই ভালো।
কলিজা
কলিজাকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেহেতু এতে ভিটামিন এ ভরপুর থাকে, সুতরাং, এক মাসে এটি ২/৩বার খেলে ক্ষতিকারক হবে না। তবে, গর্ভবতী মহিলারা প্রচুর পরিমাণে এটি খেলে গর্ভাবস্থায় দুর্দশা দেখা দিতে পারে, কারণ এটি ধীরে ধীরে রেটিনল জমা করতে পারে যা শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
কাঁচা পেঁপে
কাঁচা পেঁপে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।কারণ কাঁচা পেঁপেতে ল্যাকট্রিক্স নামক একটি উপাদান আছে যা জোলাপ হিসাবে কাজ করে এবং অকালে প্রসব ডেকে আনতে পারে।এছাড়াও পেঁপের বীজ এনজাইমে সমৃদ্ধ হয় যা জরায়ুর সংকোচনের কারণ হতে পারে, যার ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে গর্ভাবস্থায় পেঁপেকে খাবার হিসাবে খাওয়া নিরাপদ নয়।
কাঁচা দুগ্ধজাত পণ্য
গর্ভবতী নারীদের মহিলাদের কাঁচা দুধ থেকে তৈরি কিছু খাবার খাওয়া বা পান করা নিরাপদ বলে মনে করা হয় না কারণ এ ধরনের পণ্যে লিস্টারিয়া মনোসাইটোজেন – এর মতো রোগ বহনকারী ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকারক হতে পারে যা গর্ভাবস্থায় অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরামর্শ করে নিতে হবে কোনো ডায়েটিশিয়ানের সাথে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে আপনি সমস্যায় পড়বেন। এসব মাংসে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আপনার পেটে থাকা সন্তানের ক্ষতি করবে। এমনকি এগুলোর কারণে গর্ভপাতও হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন।
কলা
গর্ভাবস্থায় এড়াতে ফলগুলির এই তালিকায় এই নম্র ফলটি দেখে আপনি অবাক হতে পারেন। যদিও গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে এড়ানো উচিত। যেসব মহিলারা অ্যালার্জিতে ভোগেন এবং ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের কলা খাওয়ার বিরুদ্ধে পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ কলাতে চিটিনেস থাকে, একটি ক্ষীর জাতীয় উপাদান যা শরীরের উত্তাপ বাড়িয়ে আ্যলার্জি তৈরি করে। তাই যেসকল মায়ের কলার চিটিনেসে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের কলা খাওয়া উচিত নয়। ছাড়াো কলাতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত যে কোন মিষ্টি কলা খাওয়া এড়ানো।তবে সেটিও পরামর্শ ভিত্তিক।
আঙ্গুর
আঙ্গুরকে অন্যতম পুষ্টিকর ফল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে তবে গর্ভবতী মহিলাদের উপর তাদের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে অনেকে।আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে রেসিভারিট্রোল যৌগ রয়েছে যা আঙ্গুরের ত্বকে উপস্থিত থাকে। এই যৌগটি বিষাক্ত।তদুপরি, এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের হজম ক্ষমতা খুব দূর্বল থাকে, তাই সব মিলিয়ে অনেক মায়েদের আঙ্গুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। এক্ষেত্রেও পরামর্শ আবশ্যক।
তরমুজ
তরমুজের পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিনগুলিও প্রবাহিত করে তবে এটি করার সময় শিশু এই টক্সিনগুলির সংস্পর্শে আসে যা শিশুর পক্ষে ভাল নয়। এছাড়াও, এই ফল অতিরিক্ত খেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।
**এছাড়াও কাঁচা ডিম, অতিরিক্ত চা, কফি, আ্যলকোহল ইত্যাদি এ সময়ে বর্জন করতে হবে।
অ্যাডা বর্জনাডোটিয়ার, নিউট্রিশন থেকে এমএস, আরডিএন (আইস) লিখেছেন – জিলিয়ান কুবালা (নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ ও ডায়েটিশিয়ান অফ আইসল্যান্ড) তারা মেডিক্যালি পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশিতো করেছে। এছাড়াও পাশের দেশ ইন্ডিয়া সহ জার্মান, আমেরিকা, নিউডিল্যান্ড তাদের গবেষণায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
এবার একটি সাধারণ পরামর্শ থাকবে সব মায়েদের জন্য কী খাবে কতটুকু ক্যালরি নিবে –
- স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অর্থ হল স্বাস্থ্যকর খাওয়ার ধরণ অনুসরণ করা যাতে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবার এবং পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূল, গমের তৈরি খাবার, চর্বিহীন বা স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম (লবণ) কম এমন খাবার গ্রহণ করুন।
- অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট সীমাবদ্ধ করুন।
- ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, আয়োডিন, ভিটামিন-সি ছাড়াও অন্যান্য মিনারেলস ও ভিটামিন প্রসবপূর্ব প্রতিদিন পরামর্শ করে গ্রহণ করুন।
গর্ভবতী হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনার দ্বিগুণ খাবার খাওয়া দরকার। কতটুকু পরিমান ক্যালরি খাবেন তার একটি সাধারণ ধারণা আপনাদের দিবো –
প্রথম ত্রৈমাসিক (প্রথম ১২ সপ্তাহ) –
বেশিরভাগ মহিলাদের কোনও অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজন হয় না। সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। যারা অপুষ্টিতে আক্রান্ত তাদের ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা লাগতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩ থেকে ২৬ সপ্তাহ) –
বেশিরভাগ মহিলাদের দিনে প্রায় ৩৪০ অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। স্থুলতার অধিকারী কেউ হয়ে থাকলে এই মাপ এদিক ওদিক হবে।
শেষ ত্রৈমাসিক (২৬ সপ্তাহের পরে) –
বেশিরভাগ মহিলার দিনে প্রায় ৪৫০ অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন হয় তবে পরামর্শ আবশ্যক।
আশা করি, আপনাদের আমি একটি সাধারণ ধারণা সব কিছু মিলিয়ে দিতে পেরেছি। সবশেষে আবারো বলবো, একজন ডায়েটিশিয়ান দ্বারা নিজের ও আপনার আগত সন্তানের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করুন।
আনারসে ভ্রমরের আছে কিন্তু বেসিক্স আছে যেটা অল্প পরিমাণে খাওয়া নাকি গর্ভবতীদের জন্য ভালো। এ ব্যাপারে একটু ব্যাখ্যা করবেন।
১ম ত্রৈমাসিক