Opening Hours

Sat - Wed: 11 AM - 10 PM

আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেনো ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়… ক্ষয়ে যেতেই পারে, তবে যদি যত্ন নেন তাহলে ঠিক রাখা কোনো ব্যাপারই না। তাহলে আসুন আজ চোখ নিয়ে জেনে নেই যত জানা অজানা কথা।

প্রথমেই খাবার নিয়ে জেনে নেই চলুন –

  • কমলা রঙের শাকসবজি এবং ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ফলমূল

    সম্ভবত সর্বাধিক পরিচিত চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভিটামিন-এ এর জুড়ি নেই। ভিটামিন-এ ছাড়া আপনার চোখ শুকনো হয়ে যাওয়া থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে আমরা ভিটামিন-এ সম্পন্ন স্বস্তা ফল ও সবজি নিয়ে ২টি উদাহরণ দিবো –
    গাজর ভিটামিন এ এর ​​একটি সুপরিচিত উৎস।
    মিষ্টি আলু আরও বেশি ভিটামিন এ সরবরাহ করে।একটি মিষ্টি আলু প্রতিদিনের ভিটামিন-এ গ্রহনের পরিমানের ২০০% বেশি থাকে।

  • ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল

    ভিটামিন-সি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে, ভিটামিন-সি আমাদের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং পরিবেশগত কারণে শরীরে যে ক্ষতি হয়ে থেকে তা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ভাজা খাবার, তামাকের ধোঁয়া এবং সূর্যের রশ্মি ইত্যাদি ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলস তৈরি করে । তখন ভিটামিন-সি নতুন টিস্যু কোষগুলি মেরামত ও বৃদ্ধি করে থাকে।
    ভিটামিন-সি এর ভাল উৎস হচ্ছে আমলকী, আমড়া, পেয়ারা, লেবু, কমলা, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি। এমনকি সজিনা পাতাতেও প্রচুর পরিমান ভিটামিন-সি রয়েছে।গবেষণায় প্রমানিতো হয়েছে যে ভিটামিন-সি বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) এবং ছানিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

  • ভিটামিন-ই

    আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হল ভিটামিন-ই, যা কোষকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন-ই বাদাম, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

  • টমেটো

    পুষ্টিতে ভরপুর টমেটো।
    রসালো টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন যা তীব্র আলোতে কাজ করার সময় চোখকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়া এতে রয়েছে আঁশ, খনিজ ও ক্যারোটিন। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, সি, কে, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্রোমিয়ামসহ নানা উপাদান। এতে বিদ্যমান রাসায়নিক লুটিন এবং ভিটামিন ‘সি’ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই নিয়ম করে টমেটো গ্রহণ করুন। সালাদে কাঁচা টমেটো খাবেন, রান্নার চেয়ে বেশি উপকারী।

  • মাছ

    গবেষণায় বলা হয়েছে সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পরবর্তী জীবনে চোখের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এই মাছগুলির মধ্যে রয়েছে সালমন, টুনা ইত্যাদি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের ইলিশ মাছ কিন্তু একই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।
    এছাড়াও রাঘববোয়াল মাছ এবং কাঁকড়া ও ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। ছোটো মাছের কথা আমরা ভুলেই যাই। অথচ দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে মলা ঢেলা পুঁটি ইত্যাদি মাছ সপ্তাহে দুই কি তিনদিন গ্রহণ করতে হবে।এসকল মাছ আপনার দৃষ্টিশক্তি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই দারুণ কার্যকর হবে।

  • লুটেইন এবং জেক্সানথিন-

    সবুজ শাকসব্জীর লুটেইন এবং জেক্সানথিন হল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা শাকসব্জী ছাড়াও অন্যান্য উজ্জ্বল বর্ণযুক্ত খাবারে পাওয়া যায়। এগুলি চোখের ম্যাকুলা রক্ষার চাবিকাঠি। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে এই পুষ্টি রয়েছে। দরকারী পরিমাণে লিউটিন এবং জেক্সানথিন সহ অন্যান্য খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে লেটুস, শালগম শাক, ব্রোকলি মটর ইত্যাদি। এ সকল খাবার অবশ্যই ডায়েটে রাখবেন চোখের যত্নে।
    শাকসবজী ফল ছাড়াও আরেকটি খাবার হচ্ছে ডিম। ডিমের কুসুমে রয়েছে লুটিন এবং যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, যা চোখকে ‘মাসকুলার ডিজেনারেশন’ সমস্যা থেকে বাঁচায়৷  এ সমস্যা সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়৷ মাছে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটিঅ্যাসিড। তাই দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে আর ছোটোবেলা থেকে এসকল খাবার খাওয়া শিখতে হবে।

  • জিংক

    জিংক রেটিনাটিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং আপনার চোখকে আলোর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তবে অতিরিক্ত আপনার শরীরে কপারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, যা আমাদের রক্তের রক্ত ​​কণিকা গঠনে সহায়তা করে।তাই অতিরিক্ত গ্রহণ করবেন না। জিঙ্কের উচ্চতর খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মুরগির মাংস। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ‘বি’; যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
    আরো খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ, কাজু বাদাম, মিষ্টিকুমড়ার বিচী ইত্যাদি।

  • ভুট্টা

    ভুট্টায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন-বি ১২, ভিটামিন-এ, সিওলাইকোপিন; যা দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে৷ আধ-কাপ রান্না ভুট্টায় চোখের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান পর্যাপ্ত পরিমান রয়েছে। নিয়মিত ভুট্টা খেলে চোখের হলুদ পিগমেন্ট হারানোর কোনো ঝুঁকি হ্রাস হয়। এমনকি ছানিপড়ার ঝুঁকিও কমে যায়। তাই নিয়মিত ভুট্টা গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।

  • চিয়া সীড

    কোনও কারণ ছাড়াই একে “সুপারফুড” হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। যদি আপনি ওমেগা-৩ এর সম্পর্কে কথা বলেন তবে চিয়া সিডে সালমন বা বাদাম বীজের চেয়ে বেশি থাকে। আপনি যদি ক্যালসিয়ামের বিষয়ে কথা বলেন তবে আপনি এটি এক গ্লাস দুধের চেয়ে চিয়া বীজে বেশি পাবেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির ক্ষেত্রে একই ঘটনা, যা আপনি ব্লুবেরীতে পাবেন তার চেয়ে অনেক বেশি চিয়া সীডে পাবেন।এমন সুপারফুড থেকে কেনো দূরে থাকবেন বলুন।

  • সূর্যমুখীর বীজ

    স্প্যানিশ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই সরবরাহ করে এমন একটি ভারসাম্যযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ছানি এবং ছানির অস্ত্রোপচারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। তাই এমন স্বস্তা খাবার হাতের কাছে পেয়েও কেনো খাবেন না বলুন।

জানেন কী? আপনার সুন্দর আঁখি ভালো রাখতে কী কী ভিটামিন মিনারেলস গ্রহণ আবশ্যক? আমি জানিয়ে দিচ্ছি –

এএও অর্থাৎ আমেরিকান একাডেমি অফ অফথেলমোলোজির পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর চোখের পুষ্টির জন্য বর্তমান দৈনিক সুপারিশগুলি হল:

  • ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
  • ভিটামিন-ই এর ৪০০ IU আন্তর্জাতিক ইউনিট
  • ১০ মিলিগ্রাম লুটিন
  • ২ মিলিগ্রাম জেক্সানথিন
  • ৮০ মিলিগ্রাম জিংক অক্সাইড
  • ২ মিলিগ্রাম কপার অক্সাইড
এবার চোখের সুরক্ষায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে –

  • প্রতি এক থেকে দুই বছর পর পর একজন চক্ষু চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে হবে।
  • খেলাধুলা সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকাকালীন চোখকে সুরক্ষা দিতে হবে।
  • রুটিনমতো খাবার দাবার খেতে হবে।
  • ছোটো মাছ খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে।
  • রোদে বা বাইরে বের হওয়ার সময় সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
  • চোখের সুরক্ষার জন্য এক নাগাড়ে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। কম্পিউটার মনিটরের ব্রাইটনেস ও কন্ট্রাস্ট হতে হবে স্বাভাবিক মাত্রায়, অতিরিক্ত নয়।
  • চোখ থেকে বই-খাতার দূরত্ব ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি হতে হবে।
  • ঘরে সঠিক আলোর ব্যবহার থাকতে হবে।
  • বারবার চোখে পানির ঝাপটা দিতে হবে।
  • চোখের ধকল কাটাতে প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুমাতে হবে।
  • হাত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখ ময়লা হাতে কচলানো যাবেনা।
  • যেকোনো কাজের ফাঁকে প্রতি ৩০ মিনিটে ১ বার হলেও চোখ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হবে।

চোখ যে মনের কথা বলে। জি ঠিকই বলেছেন। এই অসাধারণ সৃষ্টিকে ভালো রাখতে এইটুকু কষ্ট করতেই হবে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। চোখকে আগলে রাখুন।


Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *