Opening Hours

Sat - Wed: 11 AM - 10 PM

হৃদয়ের গল্প শুরু হলো এইতো

গানের লাইন শুনে বুঝতে পারছেন আজকের টপিকস হৃদয়।হৃদয়ের কথা শুনতে হলে হৃদয়টাকে যে ভালো রাখতে হবে।কিন্তু কজনই বা ভাবি এই হৃদয়টাকে নিয়ে।

ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে। এ সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমার কথা শুনে ভয় পাবেন না।সবকিছুর সমাধান আল্লাহ দিয়েছেন।তাই চলুন আজ হৃদয়ের সমাধান নিয়ে আলোচনা করি।

প্রথমেই জেনে নেই হার্ট ব্লকের লক্ষণ –

  • হৃদপিণ্ডে বেশি পরিমাণে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয়। 
  • দম নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়।
  • আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁটার সময়, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়, থামলে ব্যথা কমে যায়।
  • গলা, কপাল ও মাথা ঘাম হওয়া।
  • বুকে জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করে।
  • নিচের দিকে হেলে কিছু করার ও একটু ভারী কিছু বহনের সময় কষ্ট হয়।
  • খাবার হজম না হওয়ার মতো অস্বস্তি লাগে।

এবার কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন তা জেনে নিই-

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ।উচ্চ চাপ আপনার কিডনি এবং মস্তিষ্ক সহ আপনার হৃদয় এবং আপনার দেহের অন্যান্য প্রধান অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে ক্ষতির সম্মুখীন করে।উচ্চ রক্তচাপকে প্রায়শই “সাইলেন্ট কিলার” বলা হয় কারণ এটির সাধারণত কোনও লক্ষণ থাকে না।

রক্তের উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল

কোলেস্টেরল একটি মোমযুক্ত, চর্বি জাতীয় উপাদান।যদি আমরা শরীরের ব্যবহারের চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করি, তবে সেই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে গিয়ে জমা হয় ফলে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং শরীরের অন্যান্য অংশগুলিতে রক্ত ​​প্রবাহ হ্রাস ঘটে থাকে।

ডায়াবেটিস 

আপনার দেহের শক্তির জন্য গ্লুকোজ (চিনি) প্রয়োজন।  ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ে তৈরি একটি হরমোন যা শক্তির জন্য আপনার দেহের কোষগুলিতে খাওয়া খাবার থেকে গ্লুকোজ সরাতে সহায়তা করে।আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে না বা  ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না ফলে ডায়াবেটিসযুক্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে।

স্থূলতা

স্থূলত্ব হ’ল দেহের অতিরিক্ত মেদ।স্থূলতা উচ্চতর “খারাপ” কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দ্য় এবং “ভাল” কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হৃদরোগের কারণ।

ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে

মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি এবং পুরুষরা জীবনের প্রথম দিকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে কম হয়।তবে নেহাত কম নয়।মহিলাদের আক্রান্তের সংখ্যা অনেক।

কী খেতে হবে তা না বললে আমি আপনাদের কেমন ডায়েটিশিয়ান বলুন-

পেঁপে

পেঁপেতে ক্যারোটিনয়েড বিটা ক্যারোটিন, বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন এবং লুটিন রয়েছে। এটি আপনার ডায়েটে ভিটামিন এ এবং সি ছাড়াও ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম যুক্ত করে।যা হার্টের স্বাস্থ্যকে রাখে দুর্দান্ত।

টমেটো

টমেটো বিটা- এবং আলফা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটিন (ক্যারোটিনয়েডস), ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ফাইবারযুক্ত একটি বহুমুখী হার্টের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।টমেটোতে বিদ্যমান বিশেষত লাইকোপিন কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে  সুরক্ষিত রাখে।তবে রান্না করা টমেটোর চেয়ে কাঁচা টমেটোতে পুষ্টিমান বেশি থাকে।সেক্ষেত্রে সালাদে পরিবেশন করে গ্রহণ করতে পারেন।

কমলা

কমলা  রসালো এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন, বিটা- এবং আলফা-ক্যারোটিন এবং লুটিন পাশাপাশি ফ্ল্যাভোনস (ফ্ল্যাভোনয়েডস), ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ফাইবারযুক্ত পুষ্টিতে ভরা থাকে।তাই পুরো ফলটি সেরা হৃদরোগের জন্য।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু স্বস্তা একটি খাবার যার  ভিতরে ভিটামিন এ এবং সি পাবেন এছাড়াও মিষ্টি আলু হ’ল ভিটামিন ই এর একটি ভান্ডার।এছাড়াও এর  মধ্যে পটাসিয়াম, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে ।তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে মিষ্টি আলুর জুড়ি নাই।তবে খোসা সহ খাবেন।পুষ্টিমূল্য যদি বেশি পেতে চান।

ব্রকলি 

ব্রকলিতে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ই, পটাশিয়াম, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারের পরিমান এতোই বেশি যে একে পাওয়ার হাউস বলা হয়।আপনার ডায়েটে ব্রকলি রাখা মানে  হৃদয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করার একটি নিশ্চিত উপায় হয়ে গেলো।

গাজর

গাজর ক্যারোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হিসাবে পরিচিত।এদের  প্রচুর পুষ্টিকর বিটা ক্যারোটিন রয়েছে এই বিটা ক্যারোটিনকে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির কমায় বলে কয়েকটি গবেষণায় প্রমানিতো হয়েছে।

পালংশাক 

পালংশাক বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ই, পটাশিয়াম, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারে সম্পূর্ণ।আপনার হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পালং শাক রাখুন।তবে যেকোনো শাক তেল দিয়ে যেনো ভাজা হয় এবং আয়রন জাতীয় হলে যেনো ভিটামিন সি দিয়ে খাওয়া হয়।সি এর উৎস হিসেবে এই ক্ষেত্রে লেবু রাখতে পারেন।

তিশি

এতে ওমেগা ৩ এর পাশাপাশি দ্রবণীয় ফাইবার উভয়ই থাকে।এছাড়াও উদ্ভিদের ইস্ট্রোজেন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উভয় গুণই রয়েছে।যা আপনার হার্টকে রাখবে সুস্থ।এছাড়াও তিশির তেল বেশ উপকারী হার্টের জন্য।।

মটরশুটি

এর  মধ্যে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার, বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, নিয়াসিন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড  বিদ্যমান।মটরশুটিকে তাই বহুমুখী পুষ্টির ভান্ডার বলা হয়।তাই দেরী না করে শুরু করে দিন মটরশুঁটি খাওয়া।

বাদামী ভাত অথবা ব্রাউন রাইস

ব্রাউন রাইস কেবল সুস্বাদু নয়, এটি হৃদরোগের ডায়েটেরও একটি অংশ।ব্রাউন রাইস বি ভিটামিন,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার সরবরাহ করে।তাই সাদা ভাতের বদলে ব্রাউন রাইস গ্রহণ করতে পারেন,হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে।

সয়াদুধ

সয়া দুধে আইসোফ্লাভোনস (একটি ফ্ল্যাভোনয়েড) থাকে যা প্রচুর পুষ্টিদায়ক।পুষ্টির মধ্যে রয়েছে বি-জটিল ভিটামিন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফাইটোয়েস্ট্রোজেন।সয়া দুধে পাওয়া প্রোটিন কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলারজনিতো সমস্যাও সমাধান করে থাকে।

বাদাম

বাদাম, হ্যাজনালট, চিনাবাদাম, পেস্তা ইত্যাদি সবই হৃদরোগের সমাধানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।বাদামে প্রোটিন, ফাইবার, খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।প্রতিদিন ৭-৮ টি বাদাম আপনার  হৃদয়কে রাখবে চাঙ্গা।

কলিজা 

সমস্ত অঙ্গের মধ্যে পশুর কলিজা সর্বাধিক পুষ্টি-ঘন।  বিশেষত লিভারে বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্রোমিয়াম, তামা এবং দস্তা রক্তের হিমোগ্লোবিন স্তরকে বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।তাই যারা কলিজা খেতে নাক ছিটান তারা অবশ্যই কলিজা খাবেন।

ডালিম

ডালিমে  প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যার মধ্যে হার্ট-প্রমোটিং পলিফেনলস এবং অ্যান্থোসায়ানিন রয়েছে যা ধমনীর ব্লক বন্ধ রোধে সহায়তা করে। হৃদরোগের রোগীদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে তিন মাস ধরে ডালিমের রস প্রতিদিন খাওয়ার ফলে হার্টের  রক্ত ​​প্রবাহের উন্নতি হয়েছিলো।তাই কেনো নয় ডালিম ডায়েটের সুবাদে!

আপেল

কোলেস্টেরল হ্রাস ছাড়াও তাদের আপেলের প্রোবায়োটিক সামগ্রী হৃদয়কে সুরক্ষা দেয়।অন্ত্রের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটিরিয়াগুলির জন্য প্রোবায়োটিক খাদ্য হিসাবে পরিবেশন করে যা কার্ডিওভাসকুলারের সুরক্ষা দেয়।এছাড়াও বেশ কয়েকটি গবেষণায় এসেছে যে একটি আপেল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

রসুন এবং পেঁয়াজ

এরা অ্যালিয়াম শাকসবজি।এদের  সালফার যৌগ রক্ত ​​সঞ্চালনের উন্নতি করে।দেখানো হাইপারটেনশন জার্নালে প্রকাশিত ২০১৭  সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুন ও পেঁয়াজ নিয়মিতো পরিমানমতো গ্রহণের ফলে  প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ৬৪% কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।

খেজুর

পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক পেনি ক্রিস-ইথারটন বলেছেন,খেজুর পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্য ফলে পাওয়া যায় না।জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি-এ প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, খেজুর ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতেও সহায়তা করতে পারে যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সাথে যুক্ত  রয়েছে।খেজুরে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণে বেশি,তবে গ্লাইসেমিক সূচকে কম থাকে, যার ফলে তারা রক্তে শর্করা ছড়ায় না।তবে ডায়েবেটিসে আক্রান্ত থাকলে পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

আনারস

মেডিকেল নিউজ টুডে অনুসারে, এক কাপ আনারস আপনার দিনের ভিটামিন সি এর প্রয়োজনের ১০০% এরও বেশি মিটিয়ে থাকে।ভিটামিন সি হ’ল ফ্রি রেডিক্যাল  যা হৃদপিণ্ডের কোষগুলিকে ক্ষতি করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে হার্টকে সুস্থ রাখে।সেই চিন্তা করে আমি মনে করি আনারসের জুড়ি নেই।

কলা

কলা পটাসিয়ামের মতো হার্ট-অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি ভাল উৎস, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।পটাসিয়াম উচ্চ সোডিয়াম স্তরের সাথে লড়াই করে এবং ধমনী ব্লক করা থেকে সুরক্ষা দেয়।মেডিকেল নিউজ টুডের মতে, পটাসিয়াম প্রস্তাবিত খাওয়ার দিনে ৪৭০০ মিলিগ্রাম হয় – এবং একটি মাঝারি কলাতে ৪২২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।তাই কলা খেতে বাঁধা নেই।তবে টক মিষ্টি কলা গ্রহণ করুন।

মাশরুম

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি কম মাত্রার প্রাপ্ত বয়স্কদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।  ভাগ্যক্রমে, মাশরুম ভিটামিন ডি এর কয়েকটি খাদ্য উৎসগুলির মধ্যে একটি ।এছাড়াও সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টার এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য রোদে পিঠ টা এলিয়ে দিন।ভিটামিন ডি পাবেন খুব সহজেই।

তরমুজ

ইউএসডিএ অনুসারে, তরমুজ হল লাইকোপিনের  শীর্ষ উৎস যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।নিউরোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের রক্ত ​​প্রবাহে সর্বাধিক লাইকোপেন ছিল তাদের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৫৫% কম ছিল।তাই তরমুজ খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এ হৃদয় পাথরে গড়া নয়।এর যত্ন নেয়া আবশ্যক।ঘুরে ফিরে একই ধরনের খাবার হলেও কোনটির কী কাজ কী পরিমান খেতে হবে তা জানতে কিন্তু একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শের জুড়ি নেই।তাই সময় থাকতে তা সদ্বব্যবহার করে সুস্থ রাখুন নিজেসহ পরিবার পরিজন ও কাছের মানুষদের।

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *